Header Ads

Header ADS

গল্পটা ভালবাসার , নাকি প্রতিশোধের!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

একটি বদ্ধ ঘরে খুব অন্ধকার। আলভি চিৎকার করে যাচ্ছিলো কিন্তু কেউ শুনছিলো না। হাত, পা, চেয়ারে বাধা, মুখটা কিছু একটা দিয়ে বাধা রয়েছে। তাই চিৎকার করতে গেলেও সেটা শুধুই গোঙ্গানোর আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা। হটাৎ কেউ একজন ঘরটাতে প্রবেশ করলো। বাতিটা জ্বালালো। যে প্রবেশ করলো সে সম্ভবত একজন মেয়ে। মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা। আলভি বোঝার চেষ্টা করে সেটা কে।
★চলেন একটু অতীত থেকে ঘুরে আসা যাক★
"একা বোর হচ্ছি, কখন আসবে?"
"এইতো জ্যামে বসে আছি।"
"তাড়া তাড়ি আসো আলভি।"
"জানিনা, লেট তো হতেই পারে।"
"আমি ক্যাম্পাসের গেটে তোমার জন্য দাড়াবো?"
"না থাক।"
"আচ্ছা আসলে বলবা ।"
,,,,,,ফোনটা কেটে অাদিবা অপেক্ষা করতে থাকে আলভি'র জন্য। কখন আসবে ছেলেটা। একটু একটু করে ক্লাসে সবাই চলে এসেছে। শুধু আলভিই আসেনি। ক্লাসে মন নেই অাদিবা'র। হটাৎ ক্লাসের দরজাটা খুলে লেকচারার আর আলভি দুজনেই এক সাথে আসে। ক্লাসে সবাই যার যার মত বসেছে। অাদিবা জায়গা রেখেছিল আলভি'র জন্য। কিন্তু আলভি অন্য সিরিয়ালে একেবারে পেছনে গিয়ে বসে।
,,,,,,মনটা খারাপ হয়ে যায় আদিবা'র। ছেলেটা একবার ওর দিকে তাকালোও না!!! ক্লাসে মন ছিলো না তার। বার বার পেছনে তাকিয়ে দেখে কি করছে ছেলেটা?? বার বার তাকাচ্ছিলো তাই ম্যাম বলল "আদিবা দাড়াও"। দাড়িয়ে পড়ে সে। ম্যাম জিগ্গাসা করলো "তুমি এদিক ওদিক করছো কেন বার বার, ক্লাসে মনযোগ কোথায় তোমার??"। আদিবা কিছু না বলে মাথা নিচু করে বলে "সরি ম্যাম"। ম্যাডাম অতিরিক্ত কিছু বলল না। বলল "ক্লাসে মনযোগ না থাকলে কিছু বোঝালে তো বুঝবেনা, দেখ সমস্যা তোমাদেরই বেশি হবে তাতে"। আদিবা সরি বলে। ম্যাডাম বসতে বলে তাকে। তবুও লুকিয়ে দেখছিল আলভি কি করে।
,,,,,,ক্লাস শেষ হতেই সবাই যখন দাড়িয়ে পড়লো। ম্যাম বেড়িয়ে যাবে। আলভি তখন নোট খাতাটা হাতে নিয়ে ম্যাডামের সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। আদিবার খুব রাগ হয়। ম্যামের ডেক্সে পড়া গুলো আর একটু ভাল করে বুঝে নিচ্ছিলো আলভি। অাদিবা এসে নক করে। "ম্যাম আমারও একটু প্রবলেম ছিল যদি একসাথেই বোঝাতেন???"। ম্যাম ভেতরে আসতে বলে। আলভি'র পাশের চেয়ার টায় বসে। ম্যাডাম পড়া গুলো দেখিয়ে দিচ্ছিলো আদিবা বুঝতেছিলো, আর আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছিল। ম্যাডাম ব্যাপার টা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে "তাহলে আজ একটুকুই। আমার অন্য কাজ আছে"।
,,,,,,আলভি ব্যাগ টা কাধে নিয়ে মেম কে সালাম দিয়ে বের হয়ে যায়। পেছন পেছন আদিবাও আসে। আলভির ব্যাগটা টেনে ধরে সে।
" এসবের মানে কি আদিবা "
" ভাব দেখাচ্ছো কেন??? "
" কখন দেখালাম !!! "
" দেখাওনি? ক্লাসে একবারও তাকাওনি, এখনও কথা বলোনি এসবের মানে কি? "
" না মানে ফ্রেন্ডদের সাথে এক্সট্রা কথা বলে কি দরকার? "
" কচু, তুমি তো কথাই বলোনি। "
" ওহ সরি। "
" ইট্স ওকে। বেরো বে তো??? "
" হ্যা, আজ তো একটাই ক্লাস ছিলো। এখন বাসায় ফিরবো। "
" বাসায় না। চলো ক্যাফেটেরিয়া তে যাই "
" অন্যদিন? "
" অতিরিক্ত করছো... যাবে কি যাবেনা?? "
,,,,,,বাধ্য না হয়ে উপায় ছিলো না আলভি'র। আর কোনো উপায় না পেয়ে বলল "ঠিক আছে"। নিজের অাদিবার পেছন পেছন যাচ্ছিলো সে। এরপর আদিবা কে বলে "জাস্ট টু মিনিট হ্যা?"। একটু অন্যপাশে গিয়ে নিজের মানি ব্যাগ টা হাতে নিয়ে দেখে শুধু ভাড়া'র টাকা ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। লজ্জা পেয়ে যায় আলভি। মানিব্যাগটা পেছনের পকেটে রেখে। আদিবার সামনে গিয়ে বলে, "ইয়ে মানে আদিবা, আজ আমাকে বাসায় ফিরতেই হবে তাড়া তাড়ি, নেক্সটাইম আমরা কফি খাবোই কেমন?"।
,,,,,,আদিবা ধরে ফেলে আলভির ব্যাপার। কিন্তু ডিরেক্টলি ভাবে বলেনা। ছেলেটা লজ্জা পেতে পারে ভেবে বলে "ট্রিট টা আমি দিবো, তোমাকে খেতেই হবে"। তুবও রাজি হচ্ছিল না আলভি। তাই হাতটা শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় আলভি'কে। বাকিরা হা করে তাকিয়ে থাকে।
,,,,,,কফিটার ধোয়াঁ গুলো উড়ছে। আলভি কফির কাপটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আদিবা জিগ্গাসা করে "খাচ্ছোনা কেনো??"। আলভি শান্ত গলায় বলে "আদিবা আমরা শুধুই ফ্রেন্ড তো, না মানে যেভাবে টেনে আনলে লোকে কি মন করেছে কে জানে???"।
,,,,,,একটু কাশি দিয়ে ভারী গলায় আদিবা বলে "হুমমম ফ্রেন্ড"। আলভি কফিটা হাতে নিয়ে খেতে থাকে। আদিবা আনমনা হয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকে। আলভি হাতে তুরি বাজিয়ে বলে "কি হলো??"। আদিবা কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে "না তেমন কিছুনা"।
,,,,,,,"আলভি দাড়াওওও" বিদায়ের বেলায় ডাক দেয় আদিবা। ছেলেটা দাড়িয়ে পড়ে। আদিবা সামনে গিয়ে দাড়ায়। "এক মিনিট" বলে নিজের ব্যাগ থেকে একটা হাজার টাকার নোট বের করে আলভির শার্টের পকেটে ভরে দেয়। আলভি নিতে চায়না তবুও জোর করেই দিয়ে দেয়।
,,,,,,,আলভি চলে যাচ্ছে, পেছন দাড়িয়ে ছেলেটির চলে যাওয়া দেখছে আদিবা। মনে মনে মুচকি হেসে নিজের গাড়িতে উঠে বাসায় ফিরে আসে সে। পড়ায় মন বসছিলো না তার। তাই ছেলেটিকে ফোন করে। অথচ আলভি ফোনটা রিসিভ করেনা । জাস্ট ছোট করে একটা মেসেজ করে "Good n8 Alvee..."
.
ঘুমিয়ে পড়ে আদিবা। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখে কোনো রিপ্লাই নেই। ফেসবুকে গিয়ে দেখে { • Active 10 minitues ago } . ছেলেটা ফেসবুকে এসেছিল অথচ মেসেজ করেনি। মনটা খারাপ করে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হয় সে। সারাদিন মুড অফ থাকে তার। আজ শুক্রবার তার মানে আজ ক্লাস নেই। দেখাও হবেনা।
,,,,,,সারাদিন কোন রকম ভাবেই কাটিয়ে দেয় সে। কাজিনদেন সাথে আড্ডা দেয় তবুও মনটা অন্য কারো কাছে রয়েই গেছে। গাড়িটা নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় দাড়িয়ে থাকে মন টা কিছুটা হাল্কা হলে আলভি কে ফোন করে।
---কি করছো আলভি??
---এই তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
---আমি হাতিরঝিলে তুমি কি আসবে?
---না। এখন সম্ভবনা।
---আমি তোমার জিএফ হলে এভাবে বলতে পারতে???
---কিন্তু তুমি আমার ফ্রেন্ড তাইনা?
---হুমমম। কাল তাড়া তাড়িই আসবা। তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
,,,,,,ফোনটা কেটে গাড়িটা স্টার্ট করে আদিবা, বাড়িতে ফেরার জন্য। পরদিন ক্লাস শুরু হওয়ার ২ ঘন্টা আগেই ক্যাম্পাসে চলে যায়। আলভি কে বার বার ফোন করে। কিন্তু আলভি রিসিভ করে না। একটু একটু করে ক্লাসের টাইম হয়ে যায়। ক্লাসে গিয়ে বসে সে। কিন্তু আলভি আর আসেনা। প্রায় ৩ টা ক্লাস ছিলো যা খুব বোরিং ভাবেই কাটে তার। ক্লাস থেকে বের হবে এমন সময় একজনের থেকে শোনে "দোস্ত আলভি তো আর সিঙ্গেল রইলোনা, দেখ ফেসবুকে in a relationship স্যাটাস দিয়েছে। এজন্যই তো মামা আজ ক্লাসে আসেনি, নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে গেছে"। কথাটা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় আদিবার। তাড়া তাড়ি ফেসবুকে লগইন করে দেখে ঘটনা সত্যি। তাছাড়া স্যাটাসও দেয়া রয়েছে (আজ থেকে সিঙ্গেল রইলাম না আর...কেউ একজন আমার কাধে ঝুলে বসেছে) স্যাটাসের সাইডে কিস ইমু দেয়া রয়েছে। তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে আদিবা। বাড়িতে ফিরে নিজের ঘরের দড়জা আটকে কাদতে থাকে সে। আর একটু পর পর ই অালভির স্যাটাসের কমেন্স চেক করতে থাকে। সেখানে আলভি ও তার গার্লফ্রেন্ডের দুজনই লুতুপুতু দুষ্টুমি দেখে গা জ্বলে যায় তার। এভাবেই কিছুদিন যায়। কিন্তু আদিবার সহ্যের সীমা পার হয়ে যাচ্ছিলো।
,,,,,,,এরপরের ঘটনা... একটি বদ্ধ ঘরে খুব অন্ধকার। আলভি চিৎকার করে যাচ্ছিলো কিন্তু কেউ শুনছিলো না। হাত, পা, চেয়ারে বাধা, মুখটা কিছু একটা দিয়ে বাধা রয়েছে। তাই চিৎকার করতে গেলেও সেটা শুধুই গোঙ্গানোর আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা। হটাৎ কেউ একজন ঘরটাতে প্রবেশ করলো। বাতিটা জ্বালালো। যে প্রবেশ করলো সে সম্ভবত একজন মেয়ে। মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা। আলভি বোঝার চেষ্টা করে সেটা কে।
.
মেয়েটি সামনে এসে দাড়ায়। আলভি চিৎকার করে। মেয়েটি কিছু না বলে সামনে থাকা চেয়ার টিতে বসে পড়ে। শুধু চোখ দুটো বের করে তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে। আলভি কথা বলতে চায়। মেয়েটি মুখের বাধন টা খুলে দেয়। আলভি চেচিয়ে বলে "আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?? কেন আমার সাথে এমন করছেন??" হাপিয়ে কথা গুলো বলে সে।
.
মেয়েটি কিছু বলেনা। একটি সুপারী কাটার যাতী হাতে নিয়ে আলভি'র দিকে অনেক সময় তাকিয়ে থেকেই পায়ের একটি আঙ্গুল রাখে সেটিতে। আলভি অনুনয় করে কিন্তু কাজ হয়না। হটাৎ পায়ের একটি অাঙ্গুল কেটে ফেলে সেই মেয়েট। চিৎকার করে ওঠে আলভি। রক্ত ঝরে সেই আঙ্গুলের গোড়া দিয়ে। সেটিতে আবার ব্যান্ডেজ করে মেয়েটি। মেয়েটির চোখ দুটি লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তার বুকে প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে ছেলেটির জন্য। অপর আঙ্গুলটিতে আবার চাপ দেয়ায় সেটি দিয়েও রক্ত ঝড়ে।
.
মা গো বলে চিৎকার দিয়ে উঠে আলভি। এভাবে এই আঙ্গুলটাও কেটে ফেলে মেয়েটা। তারপর নিজের মুখটা থেকে উড়নাটা সরিয়ে ফেলে সে। আলভি অবাক হয়ে বলে "আদিবা তুমিইইই"। আর একটা আঙ্গুলে যাতী টা ধরে রাখে আদিবা। আলভির দিকে তাকিয়ে বলে "অনেকবার আম্মু কে ডেকেছো, এবার যদি আমার নাম না নিয়েছো, তাহলে বাকি গুলোও আমি শেষ করে ফেলবো"। বলেই পায়ের বাকি আঙ্গুলগুলোও কেটে ফেলে সে। এরপর ডান হাতের আঙ্গুলে সেটি রাখে...এবারও মা গো বলেই চিৎকার করে আলভি।
.
অাদিবা রেগে গিয়ে বলে "আমার নাম ধরে ডাকলে কি হয়??? এবার কিন্তু জোরে আদিবা বলেই ডাকবে,,, নয়ত..." হটাৎ আদিবা খেয়াল করে আলভি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে । প্রায় অনেক সময় পর যখন তার জ্ঞান ফেরে। দেখে আদিবা তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই জেগে যায় মেয়েটা। তারপর গলাটা জড়িয়ে ধরে অাবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে গেলে। হাতপা নাড়া চাড়া করতে থাকে আলভি। আদিবা বলে ওঠে।
"একটু ঘুমোতে দাওনা লক্ষীটা"
"কি অধিকার আপনার??"
"ওলে আমার বাবুটা রেগে গেছে"
"সরুন আমার কাছ থেকে"
"না সরবোনা। তোমার কাছে থাকার প্রকৃত অধিকারই আমার।"
"না কোন অধিকার নেই আপনার"
,,,,,বসা থেকে দাড়িয়ে পড়ে আদিবা। চোখ মুখ ধুয়ে এসে দাড়ায় আলভির সামনে। খানিক সময় তাকিয়ে থেকে বলে "জানো তোমার ডান হাতের আঙ্গুল গুলো কেনো কেটেছি??? কারন ওই অাঙ্গুল গুলোর মাঝে আমার আঙ্গুল গুলো থাকার কথা ছিলো, কিন্তু সেটা কোথায় হলো?? তুমি তো অধিকার গুলো অন্য কাউকে দিয়ে দিলে। আমার কষ্ট টা একটুও বুঝেছো??? তোমার জন্য আমার শত হাজার লক্ষ্য কেয়ার গুলোর জন্য আমাকে কি বলতে "আমরা শুধুই ফ্রেন্ড তো??"। আমাকে বার বার শুনতে হয়েছে, তুমি কখনো বুঝতেও পারোনি এজন্য আমি কত কেদেছি সে চোখের জল গুলোর মূল্য কি তুমি দিবে???"
.
"আদিবা তুমি কখনো বলোনি। আর আমাদের মাঝে রিলেশান কখনো সম্ভব ছিলোনা। কারন আমি একটু নরমাল টাইপের মেয়ে পছন্দ করি। খুব স্টাইলিশ, এরকম মেয়ে কে কখনো নিজের পার্টনার হিসেবে ভাবিনি। আর এমন মেয়ের সাথে রিলেশানে যেতে চাইতাম যে কিনা আমাদের স্যাটাসের মতই, যাতে বিয়ের পরও আমাকে বুঝতে পারে, আমার মা কে হেল্প করবে। আমার পরিবার কে ভালবাসবে। "
.
"কেন আমি কি তোমার আম্মুকে ভালবাসতাম নাহ, মা ভেবে?? তাকে হেল্প করতাম না??? তোমার পরিবার টাকে আপন করে নিতাম না? তোমায় বুঝতাম না?? একবার বলেছিলে? আমি তো পুরোই চেন্জ হতে রাজী ছিলাম তোমার জন্য" কথাটা বলেই যাতীটা আলভির পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুলটিতে রেখে চেপে ধরে আদিবা।
.
"নাহহহ আদিবাআআআ...আমি আর সহ্য করতে পারছিনা তুমি আমাক একেবারেই শেষ করে ফেলো কিন্তু এভাবে কষ্ট দিওনা"। আদিবা ঘুরে তাকিয়ে বলে "ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে না?? এটা তার শাস্তি, আমি আসতে বলেছিলাম এসেছিলে???" একেক করে পায়ের আর হাতের সব কটি আঙ্গুল কেটে ফেলে আদিবা।
.
চোখ দুটো মনে হচ্ছে ভেতরে ঢুকে গেছে আলভির। মুখটা শুকিয়ে গেছে। শরীরে বল নেই। কোনো রকম বেচে আছে বলা যায়। এই এক সপ্তাহ ধরে আদিবা অনেক অত্যাচার করেছে তার ওপর। আলভি এখন বাধন মুক্ত। কিন্তু ডান হাতের আঙ্গুল গুলো কাটা তাই খুব ব্যাথা। আর দ্বিতীয়ত হাটতে পারেনা পায়ে অাঙ্গুলের ব্যাথায়। তাই হামাগুড়ি দিতে হয় তাকে। আদিবা খাইয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু সে খায়নি। তাই খাবার টা রেখে গিয়েছিল। সামনেই পড়ে আছে। কিন্তু খেতে পারছিলনা সে। খানিক সময় বাদে আদিবা আসে। আলভিকে ওভাবে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে ছুটে এসে ধরে তোলে বিছানায় বালিশটা ঠেকিয়ে বসিয়ে দেয় তাকে।
.
"তখনই বললাম খাইয়ে দেই, দেখি এখন রাগ কমাও, তোমার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ আপন নয়। দাড়াও হাতটা ধুয়ে আসি খাইয়ে দেবো"
.
"আমি মায়ের কাছে যাবো। আদিবা প্লিজ এভাবেই আমাকে যেতে দাও। আমি কাউকে তোমার কথা বলবোনা"
.
"আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছো??? আমি থাকবো কি করে??? সব সময় নিজের কথা চিন্তা করো, তুমি খুব সেলফিস"
.
"আমাকে যেতে দাও আদিবা। আমাকে আর কষ্ট দিও না। প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়"
.
"কথা বলোনা হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি"
,
,
খুব ক্ষিধে পেয়েছিলো তাই কিছু না বলেই খেয়ে ফেললো। আদিবা হাতটা ধুয়ে, উড়নাটা দিয়ে আলভির মুখটা মুছে দিলো। "আমাকে যেতে দাও আদিবা"। চেচিয়ে ওঠে মেয়েটা "উফফ অালভি। এত ভালবাসছি তোমার সহ্য হচ্ছেনা???" মনের মাঝে যে কত জ্বালা রয়েছে সেটা তখন কি করবে ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো আদিবা। নিজের জীবনটাকেও তখন কিছুনা মনে হচ্ছিলো তার। "প্রতিশোধ আমি তুলছিনা। কারন তোমাকে কষ্ট নয়, বরং ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। তাহলে কেন সেধে কষ্ট পেতে চাইছো??"
.
"মেরে ফেলো আমাকে নয়ত আমি আমার নিজেকেই শেষ করে ফেলবো। এমনিতেও তুমি আমার সব শেষ করে দিয়েছো, আর বেচে থাকার ইচ্ছে নেই"
.
"কেন? আমরা বিয়ে করবোনা??? কিচ্ছু শেষ হয়নি তোমার। আমি সারাক্ষন তোমার পাশে থাকবো, খাইয়ে দেবো, ঘুম পাড়িয়ে দেবো, দাত ব্রাশ করিয়ে দেবো, তোমাকে গাড়িতে বসিয়ে ঘুরতে যাবো। কত মজা হবে বলোতো, শুধু আমাকে একটু ভালবাসতে পারবেনা?"
.
"জীবনের থেকে আর কখনো সেই আগের মত স্বাভাবিক কিছু আশা করিনা, আমি এক অতি অসাধারন"
.
"যা তা বলোনা, চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমাও,,,আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। রাত তো অনেক হলো। ঘুমোবে নাকি গল্প করবে?? বারান্দায় যাবে?? চা কফি??? "
.
"আমি ঘুমোবো"
.
"সব সময় আমার সাথে এমন করো। আচ্ছা ঘুমোও ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।"
,,,,,,রাত ৩ টা বাজে। আদিবা ঘুমোচ্ছে। আলভি নিজের বুকের থেকে আদিবা কে খুব ধীরে সরিয়ে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করে। আদিবা ঘুমের মাঝেই নড়ে চড়ে আলভির হাতটা জড়িয়ে ধরে। খানিক সময় অপেক্ষা করে আস্তে করে হাতটা ছুটিয়ে বিছানা থেকে নেমে হামা গুড়ি দিয়ে। ড্রেসিং টেবিলের নিচের ডোর টা খোলে। একটি ব্লেড খুজে পায় সে। নিজের মাকে শেষ বারের মত একবার কল্পনায় ভেবে ব্লেড টা নিজের গলায় বসিয়ে দেয়। মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে সে।
,,,,,বিছানায় নড়ে চড়ে আলভি'র অনুপস্থিতি অনুভব করতে পেরে লাফিয়ে ওঠে আদিবা। "আলভি, এই আলভি কোথায় গেলে?? আল...ভিইইই!!!!" অবাক হয়ে যায় সে। রক্তে পুরো মেঝে ভেসে গেছে, ছেলেটা নিথর হয়ে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে "আলভি... এমন করলে কেনো,,,এখন আমি করি...এই ওঠোনা আমি তোমাকে ভালবাসি তো...এই ছেলে??? ওঠোনা...এই...আমি কাদছি তো, ওঠোনা আলভি ওঠো"
.
অনেকবার ডাকার পর যখন আর উঠলো না সে। বার বার আলভির দিকে তাকাচ্ছিলো আর চিৎকার করে কাদছিলো। তখন কি করবে ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো আদিবা। নিজের জীবনটাকেও তখন কিছুনা, মনে হচ্ছিলো তার।
,,,,,,"তুমি তো আমাকে রেখে চলে গেলে...এখন আমি কি করবো?? আমি তো শুধু ভালবাসতে চেয়েছিলাম তোমায় নিজের কাছে আটকে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি হারিয়ে গেলে, এখন আমি কি নিয়ে বাচবো?, চলে যখন যাবে, তবে একা কেনো???" কাধের উড়নাটা দিয়ে আলভির হাতের সাথে নিজের হাত শক্ত করে বাধে সে "তোমার সাথে আমার আত্মা এই ওড়নায় শক্ত করে বাধা থাকবে সারাজীবন" । এরপর ব্লেডটা নিয়ে নিজের হাতে পোচ দেয় সে। গল গল করে রক্ত ঝগড়ছে আর সে পাগলের মত হাসছে "আলভি দেখো তোমার আর আমার রক্ত এক হয়ে যাচ্ছে, আমি বেচে থাকতে তোমায় পাই নি তো কি?? মরে গিয়েও ছাড়বোনা তোমায়, আই এম সরি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর দেবোনা "। অতপর আদিবাও নিথর হয়ে পরে। দুজনই হারিয়ে যায় গভীর ঘুমে। যেখান থেকে হয়তবা আর কখনোই জাগতে পারবেনা তারা। তাই পৃথিবীর জন্য এটাই সম্ভবত তাদের ভালবাসার পরিসমাপ্তি ছিল। কারন সব ভালবাসার হ্যাপি এন্ডিং হয়না।।।।

No comments

Powered by Blogger.