Header Ads

Header ADS

মধ্যবিত্বের ভালোবাসা

প্রচন্ড গরমে রাস্তা দিয়ে হাটা প্রায় অসম্ভব। মনে হচ্ছে ঘামের দ্বারাই আজ গোসলটা সেরে নিতে পারবো।খালি পায়ে হাটতে হাটতে পায়ে ফুস্কা পড়ে যাচ্ছে। জুতাটা ছেঁড়ার আর সময় পেলনা। আর ছিঁড়বে নাইবা কেন? ঠিক কখন কিনেছিলাম মনেই পড়ছে না। সামনে গিয়ে সেলাই করে নিতে হবে ।
সামনে গিয়ে
- ভাই জুতাটা সেলাই করে দেন।
- সেলাই করার মতো কি কোনো জায়গা বাকী আছে? সপ্তাহে একবার করে জুতা নিয়ে আসেন, আর কতদিন এভাবে চলবেন? নতুন এক জুড়া কিনলেই তো হয়।
- এত বেশি জ্ঞান দিতে হবে না। যা বলেছি তাই করো। বাস ধরতে হবে। আর আপনার কাজ আপনি করেন, ফ্রিতে তো আর করছেন না।
- শেষ , ২০ টাকা দেন।
- ২০ টাকা কেন? ১০ টাকা রাখেন। 
- আচ্ছা দেন। এই কিন্তু শেষবার।
টাকা দিয়ে সেখান থেকে আসলাম। 
আর একটু হলে বাসটা মিস করতাম। মিস করলে হেটেই যেতে হতো। বাস বাড়া পাঁচ টাকা আর রিক্সা বাড়া ২০ টাকা। আমিই বুঝি ২০ টাকা রিক্সা ভাড়ার মূল্য কতো। পকেটে আছে আর ১৯০ টাকা। মাসের বাকি ১০ দিন কোনোমতে কাটানো যাবে 
কালকে চাকরির ইন্টার্ভিউ। জানি চাকরিটা হবে না ! তাদের চাহিদা মেটানোর সামর্থ্য আমার নেই, তবুও যাব। শার্টটা ময়লা হয়ে গেছে। লন্ড্রীতে দিতে হবে। প্যান্টও ধুয়ে দিতে হবে। আজ আর বাসা থেকে বেড় হতে পারবো না। আজ আর রান্না করতে পারবো না। শরীর খুবই ক্লান্ত। বাইরে থেকে খেয়ে আসতে হবে। 
বাসার সামনের হোটেলে গিয়ে বললাম-
- মামা ২০ টাকার ভাত আর ১০ টাকার তরকারি দেন।
- ভাত দেওয়া যাবে। তরকারি এত সস্তা না।
- মামা মাসের শেষ হাতে টাকা নাই। সারাদিন কিছু খাইনি।
- এই নাও।
- মামা জুল এতো অল্প। আরেকটু দেন।
- ১০ টাকার তরকারীতে যদি ২০ টাকার ঝোল দিয়ে দেই , কিভাবে হবে?
- না মামা লাগবে না।
কোনোমতে পানি দিয়ে খেয়ে খাবারের বিল দিয়ে বেড় হয়ে আসলাম। 
বাসায় এসে বাড়িওয়ালার সাথে দেখা -
- আজ তো ভাড়া দেওয়ার কথা।
- সামনের মাসেই দিয়ে দেব।
- তোমার তো সামনের মাস কখনো আসে না। ৪ মাসের বাড়া দেওনি। হয় ভাড়া দেও নয়তো কাল বাসা খালি করো।
- সামনের মাসের নিশ্চিত পেয়ে যাবেন। এখন বাসা খালি করবো কিভাবে আর কোথায় যাব?
- তা আমি জানি না। নতুন ভাড়াটিয়া আসবে। কাল সকালে টাকা দিবে নয়তো বাসা খালি করবে।
ঘুম আসছে না। বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর জন্য ফোন এসেছে। বাবার ঔষধ ও মায়ের চশমা ... খাওয়ার খরচের জন্য টাকা পাঠাতে হবে। 
একদিনে এত টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য চাকরির ইন্টারভিউ তারপর অজানা।
বেড়িয়ে তো পড়লাম। কিন্তু কোথায় যাবো? জীবনটা এত জটিল ! জটিলতা পরিহার করে চলা আরও জটিল ! তবুও তো জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে হবে। ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যাবে না। কিন্তু টিকে থাকতে হলে সংগ্রাম করতে হবে। কিন্তু এখন আমি ক্লান্ত সৈনিক। সৈনিকের কাজ যুদ্ধ করা, সে ক্লান্ত কি না তা দেখার বিষয় নয় থাকে যুদ্ধ করতেই হবে।
ইন্টার্ভিউ দিয়ে আসলাম। ঘুষ ছাড়া চাকরি অসম্ভব। আমার মতো ছেলের পক্ষে যা অসম্ভব। 
বাসা থেকে বেড় করে দিলো ! এখন কোথায় থাকবো? শহর থেকে চলে যাওয়া যাবে না। এখন একমাত্র ভরসা ইমন।
তাই ইমনকে ফোন দিলাম -
- হ্যালো, ইমন ? 
- হ্যাঁ, বল।
- কেমন আছিস?
- ভালো। তুই?
- ভালো। দুস্ত , একটা বিপদে পড়ে ফোন দিলাম।
- কি ? 
- বাড়িওয়ালা বাসা থেকে বেড় করে দিয়েছে।
- কেন ? 
- পরে বলবো। আগে তুই আমার থাকার ব্যবস্থা করে দে।
- আচ্ছা দেখছি। কিছুক্ষণ পর জানাচ্ছি।
- এই শহরে তুই ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমাকে হতাশ করিছ না দুস্ত। 
- আচ্ছা চিন্তা করিস না। আমার বাসায় চলে আস। যা করার কাল করবো।
রাত হয়ে গেলো। সারাদিন কিছু খাইনি। প্রচন্ড ক্ষিধে লেগেছে। মনে হচ্ছে কেউ মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটের মধ্যে জ্বলন্ত কয়লা ঢেলে দিয়ে নির্যাতন করছে । কিন্তু পকেট প্রায় ফাকাঁ। 
চা বিস্কুট দিয়েই রাতের খাবার সেরে নিতে হবে।
তাই বাসার সামনের হোটেলে গেলাম। 
- মামা একটা চা আর বিস্কুট দেন।
- খালি চা আর বিস্কুট দিয়ে কি হয়ে যাবে। সারাদিন তো একবারও আসলে না। আর যতদূর জানি আর কোনো হোটেলে তো যাওনা।
- আপনাকে যা বলেছি তাই করেন।
- গতকালের ঘটনার জন্য এখনও রেগে আছেন নাকি ?
- কেনো রেগে থাকবো। ভুল তো কিছু বলেননি।
- আচ্ছা বাদ দেন। গতকাল অন্য একজনের উপায় রেগে ছিলাম। তাই এমন করেছিলাম। এই চা নেন।
চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য ইমনের বাসা।
বাসার নিচে এসে ইমনকে ফোন দিলাম -
- হ্যালো ইমন
- হ্যাঁ। তুই কোথায়?
- বাসার নিচে।
- উপরে চলে আয়।
- আচ্ছা, আসছি।
তারপর বাসায় ঢুকলাম। 
ঢুকার পর ইমন জিজ্ঞেস করলো -
- রাতে কিছু খেয়েছিস?
- হুম, খেয়েছি।
- দেখে তো মনে হচ্ছে না। আর তুই যে কিপটা, কি খাবি আমার জানা আছে।
- না দুস্ত খেয়েছি।
- তবুও খেতে হবে। না খেলে খবর আছে।
- আচ্ছা খাবো।
- বাসা থেকে কেন বেড় করে দিলো ?
- সময়মতো বাড়া দিতে পারিনি। এখন খুবই ক্লান্ত।
- তুই না ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েছিলি? 
- দুই লক্ষ টাকা চায় ! 
- এখন প্লেন কি?
- দেখি কি করা যায়। প্রথমে বাসা খুজতে হবে। 
- যতদিন বাসা পাবি না, আমার বাসায় থাকবি।
- ধন্যবাদ দুস্ত। তুই না থাকলে কি যে করতাম।
- এসব বাদ দে। বল তন্দ্রার খবর কি ?
- অনেকদিন ধরে কথা হয় না।
- কেন?
- এমনি। ও যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি করিনা।
পরদিন আবার বেড়িয়ে পড়ি। মনে পড়ে তন্দ্রার কথা।
ভালবাসা একটা উড়ন্ত পাখি। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে। ধনী-গরীব , মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত কিছুই বুঝেনা। যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বাসা বাঁধে। আমার জীবনেও পাখিটি বাসা বেধেঁছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য ! জানতাম না যে মধ্যবিত্তের জীবনে ভালবাসা আসতে নেই ! 
নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি। পরিচিত কেউ নেই । কলেজের পাশে একটি বাসা ভাড়া নিই। বাসায় দুইটা কক্ষ। একটা শোয়ার অন্যটা রান্নাঘর। বাসার পাশেই একটা বড় অট্টালিকা। বাসাটা ছিলো কলোনির মতো। বিল্ডিংয়ে কয়েকটি পরিবার থাকতো। আমার কক্ষ ছিলো তিন তলায়।
কলেজে প্রথম দিনে ইমন ও রাজীবের সাথে পরিচয় হয়। আমরা একসাথে ক্লাস করতাম আড্ডা দিতাম।
একদিন ইমন ও রাজীব কলেজে আসেনি। তাই কলেজ ছুটির পর একা হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন আমাকে ডাকছে-
- এই যে দাড়ান। 
- আমাকে ডাকছেন ? 
- আপনি ছাড়া কেউ কি এখানে আছে ? 
- হুম নেই। কেন ডাকছেন ? 
- আমার একা যেতে ভয় করছে। আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যান।
- আপনাকে তো আমি জানি না আর আপনার বাসাই বা কোথায় ? 
- দাড়িয়ে কথা বা বলে হাটতে শুরু করুন। হাটতে হাটতে কথা হবে।
- আপনার নাম কি ? বাসা কোথায় ? প্রতিদিন কলেজ যাই এই রাস্তায় কোনোদিন তো আপনাকে দেখি না আজ হঠাৎ করে ...
- থামুন। এত প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর কিভাবে দিব ?
- হুম। আপনার পরিচয় ? 
- আমি তন্দ্রা। আপনার বাসার সামনেই আমার বাসা।
- কোনোদিন তো কলেজে যেতে দেখিনা ? 
- প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে যাই। আজ ড্রাইভারকে আসতে না করেছি।
- কেন ? 
- এখন থেকে আপনার সাথেই যাব।
এভাবে তন্দ্রার সাথে পরিচয় হয়। 
প্রতিদিন একসাথে কলেজে যেতাম - ফিরতাম।
ধীরে ধীরে একজন অন্য জনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। সব সময় তন্দ্রার কথা ভাবতাম। সেও আমাকে ছাড়া বুঝতো না। মনের মধ্যে ভালবাসার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। বড় ঘরের মেয়ে হয়েও ছিলনা তার কোনো অহংকার। সব সময় সহজ সরল হয়ে থাকতো। একজন আরেকজনকে ভালোবাসতাম কিন্তু কাউকে বলতে পারেনি। তার আগেই নেমে আসে ঝড়। ঝড়ে ভেঙে যায় পাখিটির বাসা। যখন সব কিছু ঠিক থাকে প্রকৃতি তা মেনে নেয়না। আমার জীবনেও প্রকৃতির প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়।
হঠাৎ করে তন্দ্রার বাবা জানতে পারে আমাদের সম্পর্কের কথা। আমি মধ্যবিত্তের সন্তান বলে তিনি সম্পর্ক মেনে নেননি। আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেন।
সেদিন ছিলো তার সাথে শেষ দেখা। সে আমাকে বললো
- বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।
- জানি।
- কিছু বলো।
- কি বলবো ? 
- আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না ! 
- কি ?
- ঠিক শুনেছো। বিয়ে করে ফেলো। আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না!
- তুমি কি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে ? 
- পারবো।
- এটাই আমাদের শেষ দেখা।
তন্দ্রা অনেক কেঁদেছিলো। আমার ও বুকের মধ্যে ঝড় উঠেছিল। অঝরে ঝড়েছিলো বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় মুছে যাচ্ছিল তন্দ্রার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্তের স্মৃতি। জানিনা আমি ছিলাম কতটা সঠিক। তবুও দেখতে চাই তোমাকে সুখী।
আজ দুই বছর হয়ে গেলো তন্দ্রার সাথে যোগাযোগ নেই। মাঝে মাঝে সে করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি সুযোগ দেই না। আমার এই অবহেলিত জীবনে কাউকে জড়াতে চাই না। নির্মম জীবনে সব সময় ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আমার জীবনটা গাছের শুকনো পাতার মতো। ঝড়ে কোথায় উড়ে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। অনিশ্চিত জীবনের সম্মুখে হাটছি।
ইচ্ছে করে নিজেকে শেষ করার। কিন্তু নিজের সাথে শেষ হয়ে যাবে একটি পরিবার। কতগুলো অপূর্ণ স্বপ্ন। বসে আছি রাস্তার পাশে। মনের আকাশটা মেঘলা হয়ে গেছে। হয়েছে মুহুর্তের জন্য নিরব। ঝড়ের পূর্বাভাস। যে কোনো সময় শুরু হতে পারে ঝড়। নেমে আসতে পারে বৃষ্টি।
কিন্তু আমি ঝড় মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। যদিও ক্লান্ত তবুও আমাকে মোকাবেলা করতে হবে। নয়তো ঝড়ে উড়ে যাবে একটি পরিবার ও বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় মুছে যাবে শত অপূর্ণ স্বপ্ন।
কল্পনায় আছি তন্দ্রাকে নিয়ে ...
হঠাৎ কেপেঁ উঠলো ফোনটা। অপরিচিত নাম্বার । ফোন ধরে বললাম - 
- হ্যালো, কে বলছেন?
- এটা কি সজীবের নাম্বার?
- হ্যাঁ। আমিই সজীব।
- দুস্ত , আমি রাজীব।
- রাজীব ! এতদিন পর মনে হলো?
- আর লজ্জা দিস না। কালই দেশে ফিরেছি।
- ইমনের সাথে কথা হয়েছে। তর চাকরির জন্য টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা আমি আর ইমন দিবো। 
- কিন্তু আমি নিতে পারবো না ! 
- তকে নিতেই হবে। কিন্তু ফ্রি তে দিব না।
- মানে?
- তকে একটা কাজ করতে হবে।
- কি তন্দ্রাকে বিয়ে করতে হবে !
- ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে ! 
- হয়নি। তর অপেক্ষায় বিয়ে করেনি।
- কি?
- হ্যাঁ। আজই তোদের বিয়ে।
- মানে?
- পরে বুঝবি। কলেজে চলে আস। এখন রাখছি।
সব কিছু অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। হঠাৎ সবকিছু কেমন হয়ে গেলো। কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কলেজে গেলে সবকিছু বুঝতে পারবো।
কলেজে গিয়েই তন্দ্রার সাথে দেখা ! দেখে আমাকে বললো-
- তুমি তো আমাকে ভালোবাস না! তাহলে কেন এখানে এসেছ?
- কে বলেছে ভালোবাসি না? আমার জীবনের চেয়েও ভালোবাসি।
- তখন কেন মিথ্যা বলেছিলে?তোমাকে ছাড়া কিভাবে আমি সুখী হতে পারি?
-সরি। আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দাও।
- না। পারবো না। তোমাকে শাস্তি পেতে হবে!
- কি শাস্তি? আমি মেনে নিতে প্রস্তুত।
- সারাজীবন আমার হৃদয়ের কারাগারে বন্দী থাকতে হবে।
ভাবছেন গল্পের শুভ সমাপ্তি হয়েছে?
এটা শুধুই কল্পনা। তন্দ্রার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। আমেরিকায় অনেক সুখী আছে।
অতঃপর কল্পনার জগৎ থেকে বের হয়ে নিকোটিনের কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ধূলিমাখা রাস্তায় আনমনে হাটতে শুরু করলাম।
আসলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের আছে অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন। কিন্তু রঙ্গিন স্বপ্নের মাঝে কোনো বাস্তবতা নাই। কষ্টগুলো ভুলতে নিকোটিনের ধোঁয়া একমাত্র ভরসা।
"নিকোটিনের কালো ধোঁয়াকে কষ্টও ভয় পায় "!

No comments

Powered by Blogger.