Header Ads

Header ADS

নতুন করে প্রেমে পড়লাম অনন্যার

লেখক: আরাফাত ররহমান শুভ

সকাল ৯টা। কাঁথাটা গায়ে চড়িয়ে, ফুল
স্পিডে ফ্যান ছেড়ে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ মনে
হল রুমে বৃষ্টি হচ্ছে। একটু পর খেয়াল
করলাম, আসলে আমার ফোনের
রিংটোন ই বৃষ্টির শব্দ ! ক্লান্ত চোখে
ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম।
.
অনন্যা ফোন দিয়েছে ! প্রায় লাফ
দিয়ে বসলাম .বিছানার ওপর। ও যদি জানতে
পারে যে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছি,
তবে আমার কপালে শনি আছে। তাই
কন্ঠটা একটু পরিষ্কার করে রিসিভ করলাম।
বললাম-
.
-হ্যা বাবু, বলো
.
-এতো দেরি হলো কেন রিসিভ
করতে? ঘুমাচ্ছিলেন সাহেব?
.
-না আমি তো...
.
-থাক, মিথ্যা বলতে হবেনা। কন্ঠ শুনে
বুঝেছি। একদম ৪টায় যদি পৌড়পার্ক এ না
পাই,সত্যি বলছি খুন হবা তুমি। তোমায় খুন
করে কাঁদতে পারব না, তাই ৪টায় ই আসবা।
.
-ওক্কে জান ! একদম ৩.৫৯ মিনিট এ আমায়
পৌড়পার্কএ পাবে।
.
-জানা আছে। আজ প্লিজ দেরি করোনা
বাবুটা। প্লিজ বাবু।
.
-আচ্ছা বাবু।
. ওহ পরিচয়টাতো দেওয়াই হল না আমি শুভ
ইন্টার ১ম বছরের ছাত্র আর ওর নাম
অনন্যা এস. এস. সি পরীক্ষা দিল এইবার
আজ প্রায় ৪ সপ্তাহ পরে ও দেখা
করতে চেয়েছে। এমনিতে ও খুব
একটা দেখা করেনা। কিন্তু দেখা করার
সময় দেরি হলে আমারর অবস্থা হয়
ভয়াবহ। অনন্যার কন্ঠ শুনে বুঝলাম, দেরি
হলে আজ খুন হবার চান্স আছে, তাই
সত্যিই ৪টার আগে যাওয়ার প্রস্তুতি
নিচ্ছিলাম। কিন্তু দুপুরে ঘুমাতেই ৩.৪৫
বেজে গেল। তবুও তেমন কিছু হবেনা
ভেবে আস্তে আস্তেই তৈরি হচ্ছিলাম।
.
আজ অনন্যার প্রচন্ড অপছন্দ হলুদ
পাঞ্জাবী পরেছি। হলুদ পাঞ্জাবী
পরলে ও প্রচন্ড রেগে যায়। আর তখন
ওর চোখগুলো আরও মায়াবী লাগে,
যার প্রেমে আমি বারবার পড়ি।
.
হেডফোন কানে লাগিয়ে রাস্তায় হাটছি।
হঠাত অনন্যার ফোন-
.
-হ্যা জান, বলো।
.
-৪.১৫ বাজে। আমার কথার কোনোই
দাম নাই তোমার কাছে?
.
-না মানে রিক্সা পাইনি। দৌড়ে আসছি এখন।
.
-বগুড়াতে কোনো কালেই রিক্সার
অভাব হয়না।
.
বলেই ফোন কেটে দিল অনন্যা। আমি
বুঝে নিলাম, বেশ বড় একটা ধাক্কা
আসবে আজ।
.
যখন পৌড়পার্কে পৌছলাম, দেখলাম
মহারানী আমার অপেক্ষায় বসে
আছেন। আমি একটা ফিছলা হাসি দিয়ে
বসতে গেলাম। তখনই ঘটল দুর্ঘটনা।
অনন্যা প্রায় চিৎকার করে বলল-
.
-ওঠ শয়তান, আজ সারাদিন তুই আমার সামনে
দাড়িয়ে থাকবি।
.
আমি সম্পুর্ন হতাশ হলাম। কারন আজ অনন্যা
তুই'করে বলেছে ! এর আগে যতবার
এমন হয়েছে, আমি বসতে পারিনি,
দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তাই চুপচাপ
দাড়িয়ে রইলাম।ও আবার বলল-
.
-ঐ এইডা কি পরেছেন স্যার, হ্যা? হিরু
হতে চাও শয়তান? তুই আজ খুন হবি রে।
.
-না মানে...
.
-একদম চুপ ! হেডফোন পরে আছিস
কেন শয়তান? আমার কথা তোর বিরক্ত
লাগে? এক্ষুনি এটা খুলে আমায় দিবি, নয়ত
মার খাবি।
.
-না জান, হেডফোন তো এমনি লাগিয়ে
রাখছি। গান চলছে না।
.
-তাই? ফোন বের কর
.
-না জান, আমি সত্যি বলছি
.
-বের কর বলছি শয়তান !
.
আমি ভয়ে ভয়ে ফোনটা দিলাম ওকে।
ও যেই হেডফোন খুলল, প্রচন্ড
শব্দে বেজে উঠল"লিংকিন পার্ক"এর
নাম্ব গানটির এই লাইনটা - I've become so
numb !
.
আমি দৌড়ে পালাব ভাবছি, কারন এই গানটা নাকি
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পঁচা গান ! কিন্তু আমার
কাছে তো এটা পৃথিবীর সেরা গান, ও
কেন জানি বোঝেনা এটা। মুখ গোমড়া
করে বলল-
.
-তুমি আবার এটা শুনছ !
.
-না মানে প্লে লিস্টে ছিল। তাই বাজছে।
আমি ইচ্ছা করে শুনিনি।
.
-আমার সাথে প্রেম করে তুমি অসাড়
হয়ে যাচ্ছো?
.
-না মানে, এই গানটা তো এটা মিন করেনা
বাবুটা
.
-আমায় শিখাতে আসবানা ! আমি বুঝি তো,
আর তোমায় কে বলেছে আমার
সাথে দেখা করতে আসতে? যাও নাম্ব
হয়ে থাকার দরকার নাই।
.
মেয়েটা কেঁদে ফেলেছে। আমি
বুঝিনি এই গানটা এমন ইফেক্ট আনবে ওর
ওপর। আমি ইচ্ছে করেই এই গানটা
শুনেছি। ওকে রাগানোর ইচ্ছা ছিল, কিন্তু
ওকে কাঁদানোর ইচ্ছা কখনই ছিল না। আমি
কি করব বুঝতে পারলাম না।
.
আমি বুঝতেও পারিনি কখন আমার
দুচোখের জল বাধ ভেঙেছে।
আস্তে করে বললাম,
.
-বাবুটা, এই গান আর কোনোদিন শুনব না।
.
-কাঁদছ কেন গাধার মত?
.
-আমার রাজকুমারী কাঁদছে যে !
.
-আমি মুছে দিব তোমার চোখের ঐ
শুভ্র কষ্ট গুলো?
.
-হু
.
এরপর আমার চোখের অশ্রুগুলো
অনন্যার আলতো .হাতের ছোয়ার
মাঝে জায়গা খুজে নিয়ে পালালো আমার
কাছ থেকে। অনন্যা কপট রাগ দেখিয়ে
বলল,"এমন ছিচ কাঁদুনে বর আমার একদম
পছন্দ না, বুঝেছ আমার মেয়ের
আব্বু..."
.
আমি আবার নতুন করে প্রেমে পড়লাম,
আমার রাজকুমারীর প্রেমে। ওর
চোখ গুলোর অশ্রুবিন্দুর প্রেমে,
ওর ভালোবাসার প্রেমে পড়লাম আমি।
আস্তে করে বললাম-
.
-জ্বী আমার মেয়ের আম্মু। আচ্ছা,
তোমায় একটা কবিতা শোনাবো?
.
-হু
আমি রিতমের মত বললাম-
"ধরো খুব অসুস্থ তুমি,
জ্বরে কপাল পুড়ে যায়,
মুখে নেই রুচি,
নেই কথা বলার অনুভুতি,
এমন সময় মাথায় পানি দিতে দিতে
তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে যদি বলি-
ভালবাস?
তুমি কি চুপ করে থাকবে?
নাকি তোমার গরম শ্বাস,
আমার শ্বাসে বইয়ে দিয়ে বলবে
ভালবাসি, ভালবাসি..."
.
.
আমি কবিতা শেষ করে তাকালাম অনন্যার
চোখের দিকে। দেখলাম বিন্দু বিন্দু
মুক্ত দানা জ্বল জ্বল করছে। আমি বললাম-
.
-কিছু ভুল করলাম বাবুটা?
.
অনন্যা কিছু বলল না, শুধু আমার বুকে
ঝাপিয়ে পড়ে আমার হলুদ পাঞ্জাবী টা
ভিজিয়ে দিল ওর অশ্রু দিয়ে। আমি কিছু
বলার আগেই ও বলে উঠল-
.
-ভালোবাসি... ভালোবাসি...
.
আমি আলতো করে ওর সিথিতে একটা
ভালোবাসা একে দিলাম। আবার প্রেমে
পড়লাম, অনন্যার ভালোবাসার প্রেমে...
আমার রাজকুমারীর প্রেমে।
ভুল ট্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

No comments

Powered by Blogger.