Header Ads

Header ADS

বেস্ট অব লাভ

বাসাটার কলিংবেল চাপার বেশ কিছুক্ষন পর একটা
ছেলে এসে দরজা খুলে দিল।
বোধহয় এটাই
আমার ছাত্র।ওর মায়ের সাথে মিল আছে চেহারায়।
ভাগ্যিস কাল চাকরির ব্যাপারে এক আত্মীয়ের সাথে
কথা বলতে গিয়ে ওর মায়ের সাথে দেখা।
বায়োডাটা দেখে বললেন ওনার ক্লাস ফোর পড়ুয়া
ছেলেটাকে পড়াতে পারব কিনা।আমি বিনা বাক্যব্যয়ে
রাজি হয়ে গেলাম।স্যালারি অবশ্য ভালোই,ওনারা
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ইনকাম করে কিনা তাই।
ছেলেটাকে শান্তশিষ্টই মনে হচ্ছে।
সে দরজা খুলে দিয়ে চলে গেল।
আমি কি
ড্রয়িংরুমেই দাঁড়িয়ে থাকব নাকি ভেতরে যাব বুঝতে
পারছিলাম না।ভালোমত খেয়াল করতেই দেখি
শ্যামলামতন একটা মেয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে
কেঁদেই যাচ্ছে।
আমাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে
কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল
না।টিভিতে দেখলাম তাহসান আর মীমের এক বাংলা টেলিফিল্ম
খুব ইমোশনাল সিন দেখাচ্ছে,
মীম তার শপ্ন-কুমারকে
খুঁজে পেয়েছে!
এটা দেখে এত
বড় মেয়ে কাঁদছে, এতে আমার খুব হাসি পেল। আমি
মেয়েটার সামনেই হেসে ফেললাম। তখন সে
এতটা মন খারাপ করা চোখ নিয়ে আমার দিকে
তাকাল, আমি নিজের অজান্তেই বললাম "স্যরি!"।
সে
কিছু না বলে টিভি অফ করে উঠে গেল। সেদিন
আমার পুরোটা দিন মন খারাপ ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল
কেন যে হাসতে গেলাম! কেউ আমার কারণে
কষ্ট পেলে আমি আবার সেটা একেবারেই সহ্য
করতে পারিনা,তা যত তুচ্ছ কারণেই হোকনা কেন।
পরে জানতে পেরেছিলাম মেয়েটা আমার ছাত্র
আপনের বড় বোন স্নিগ্ধা ।
এ বছর কলেজে ভর্তি
হয়েছে।
এরপর অনেকদিন আর স্নিগ্ধাকে দেখিনি। ও আমার
সামনে আসত না। অবশ্য আপনকে পড়াতে গেলে
ওদের কাউকেই তেমন দেখতাম না।
ওদের বাবা
ব্যবসায়ী,মা চাকরিজীবি,দুজনেই ভীষন ব্যস্ত। তাও
মাঝে মাঝে আপনের মায়ের সাথে দেখা হয়।
চমৎকার শান্ত মহিলা। উল্টো ওর বাবা ততটাই রাগী!
যতবার দেখেছি একবারো ধমক ছাড়া কথা বলতে
শুনিনি। ওদের দুই ভাইবোনকে দেখাশোনা করতে
বাসায় "খালা" বলে একজন মহিলা থাকে।
মা-বাবার সান্নিধ্য
না পেয়ে স্নিগ্ধা-আপন ওদের জগৎটা নিজেদের
মত করে সাজিয়ে নিয়েছে। চিরকাল মা-বাবার ছায়ায় বড়
হওয়া আমি তাই ওদের দেখে প্রথম প্রথম বেশ
অবাক হতাম।
একদিন ওদের বাসায় গিয়ে কয়েকবার বেল
বাজানোর পর স্নিগ্ধা দরজা খুলে দিল।
আমার দিকে
তাকিয়ে ও এত খুশি হল যে আমি পুরো ভ্যাবাচেকা
খেয়ে গেলাম। ভাবছি আমাকে দেখে এত খুশি
হবার কি আছে!
--"ভাইয়া বইগুলো একটু দেখি?"
ওর কথায় স্বাভাবিক হয়ে বুঝতে পারলাম ওর খুশির
কারণ আমি নই, আমার হাতে থাকা রবীন্দ্রনাথের
কয়েকটা উপন্যাস! সেগুলো হাতে নিয়ে
নেড়েচেড়ে বলল,
--"বইগুলো আমাকে
একদিনের জন্য দেবেন প্লিজ? আমি কালই ফেরত
দিয়ে দেব।"
এত সুন্দর করে অনুরোধ করলে কি আর না দিয়ে
পারা যায়! আমি বললাম,
--"বই আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য
ছিল,তবে তুমি নিতে পারো। একদিনে তো আর সব
পড়তে পারবেনা, তোমার পড়া শেষ হলে
দিও, প্রব্লেম নাই।"
ও ব্যস্ত হয়ে বলল,"না না আমার পড়তে বেশি সময়
লাগবেনা।" কয়েকটা বই পেয়ে কেউ এত খুশি হয়!
এই প্রথম ওকে হাসতে দেখলাম। হাসিটা তো বেশ
সুন্দর!
স্নিগ্ধা পরদিনই বই ফেরত দিল।
--ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস বইগুলো দেয়ার জন্য। এত্ত
সুন্দর একেকটা উপন্যাস!বিশেষ করে "নৌকাডুবি"।
আপনি পড়েছেন?
-নাহ আমি বই-টই কম পড়ি। আমার এত ধৈর্য নাই!
--কি বলেন! বই পড়া তো ভালো অভ্যাস। আচ্ছা
আপনার কাছে রবীন্দ্রনাথের আর কোন বই
আছে? আমাকে এনে দিতে পারবেন? জানেন আমি
ভাবতাম ওনার লেখা অনেক কঠিন,"রক্তকরবী"
পড়ে আমি কিচ্ছু বুঝিনাই। তাই রবীন্দ্রনাথের বই
কিনতাম না। এখন থেকে কিনব।
-হুমম,রাইটারদের সব লেখা তো আর এক রকম
হয়না।
--সেটাই তো। জানেন "নৌকাডুবি"তে না,কমলা
যখন.......
এভাবেই চলতে থাকে ওর কথার গাড়ি। ওকে
দেখে যতটা চুপচাপ মনে হয় আসলে ও অনেক
কথা বলতে পারে। অবশ্য সেটা ব্যক্তিবিশেষের
ক্ষেত্রে, আমার সাথে কথা বলে ও তৃপ্তি পেত
তাই বোধহয়। কারণ আমি হচ্ছি নীরব শ্রোতা। আমি
একটা কথা বললে ও বলে দশটা। আমাদের টপিক
হচ্ছে গল্প-উপন্যাস, সিনেমা-নাটক, দেশ-বিদেশের
খবর আরো কত হাবিজাবি! আপনকে পড়ানো শেষ
হলে আমাদের আড্ডা শুরু হত, স্নিগ্ধা প্রায়ই দাবা নিয়ে
বসত। কিন্তু কখনোই আমাকে হারাতে পারতনা বলে
মন খারাপ করত। প্রতিবার হেরে যাওয়ার পর
নিজেকে নিজে স্বান্তনা দিত এই বলে,"আমি
এখনো শিখছি! আরো কিছুদিন শিখলে নিশ্চয়ই
আপনাকে হারাতে পারব! "আমি বা আপন কেউ যদি
হেসেছি তবেই সেরেছে। কোথা থেকে
যে ওর চোখে এত পানি আসে আল্লাহ জানে!
আমি কখনোই পড়ানোর পর এক ঘন্টার বেশি সময়
দিতে পারতাম না তাই দুই ভাইবোনই মন খারাপ করত।
আর ছুটির দিনগুলোতে দুজন জোর করে
আমাকে শপিংয়ে নিয়ে যেত। ওদের মা দেখেও
কিছু বলত না, নিজের ছেলের মতই দেখত
আমাকে। ওদের সাথে সময় কাটাতে কেন জানি
আমারো বেশ ভালো লাগত।
ভালো লাগার কারণ টের পেলাম কিছুদিন পর।
আপনের বার্ষিক পরীক্ষার পর প্রায় একমাস ওকে
পড়াতে যাইনি।
এ সময়টা আমি ভীষনভাবে সেই
শ্যামলা গালে হালকা টোল পড়া হাসিটা মিস করতে
থাকলাম। আরো মিস করছিলাম স্নিগ্ধার অনর্গল
বকবক, দাবার চাল নিয়ে চিন্তিত সেই মুখভঙ্গি। তবে কি
আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি? না, এসব কেন ভাবছি
আমি। আসলে আমি ভাবতে চাইছিনা। আমার বাবা-মার বিশ্বাস
ভেঙে, স্নিগ্ধার মায়ের বিশ্বাস ভেঙে, আমি ওকে
ভালবাসতে পারিনা। আমি এখনো ছাত্র, তাছাড়া আমাদের
আর্থিক অবস্থা এত খারাপ না হলেও ওদের মত
ভালো নয়।
ঢাকা শহরে আমি নিজের খরচ নিজে
চালাতে চাই তাই টিউশনি করি। আর স্নিগ্ধা? আমাকে
পেয়ে ওর একাকিত্বে হয়তো কিছুটা প্রলেপ
পড়েছিল তাই কাছে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে
আবার ভুলে যাবে। এভাবে যতই ভাবিনা কেন ওকে
কিছুতেই ভুলতে পারিনা। কিন্তু রেজাল্টের পর
পড়াতে গিয়ে আমি পুরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।
পড়ানো শেষে স্নিগ্ধা আমার হাতে একটা খাম
ধরিয়ে দিয়ে বলল,
--"বাসায় গিয়ে পড়বেন।"
আমাকে বরাবরই আপনি করে বলে।
আমার তর সইছিল না, ওদের বাসা থেকে বের
হয়েই খাম খুললাম। ওরে বাবা, এ তো স্নিগ্ধার বিশাল
এক চিঠি! টিভি দেখে আর উপন্যাস পড়ে মেয়েটা
নিজের ভেতর আবেগের সমুদ্র বানিয়ে
ফেলেছে!
চিঠির সারমর্ম এই,
"ও আমাকে
ভালবেসে ফেলেছে। এ কটা দিন আমাকে ছাড়া
কয়েক যুগ মনে হয়েছে। ও রিয়েলাইজ করতে
পেরেছে যে আমার মত করে ওকে কেউ খুশি
রাখতে পারবেনা। এর আগে ও কাউকে
ভালবাসেনি, আমার জন্য ওর ফিলিংস আসলেই
অন্যরকম। আমি যদি ওকে ভালবাসি তবে ও আমাকে
ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং আরো
অনেক কথা!"
চিঠি পড়ে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।
এখন ওকে কি বলব?
অনেকবার চেয়েও ওকে আমি 'না' বলতে পারিনি।
ওকে কষ্ট দেয়ার কথা আমি ভাবতেই পারিনি। যে
একাকিত্বে ওর এত ভয়, তাতে আমি আর ওকে
ঠেলে দিতে পারিনি.........আস্তে আস্তে ওর
মায়ায় আরো বেশি জড়িয়ে গেছি। এখন মনে হয়
ওর একটু খুশির জন্য আমি সব করতে পারি। স্নিগ্ধার ওর
কথা রেখেছে। ও কখনোই আমাকে কষ্ট
দেয়না। মাঝে মধ্যে দুই একটা গল্পের বই বা মুভির
সিডি পেলেই এত খুশি হয়! অন্য কোন গিফট দিলেও
নিতে চায়না। নিজেকে এত ভাগ্যবান মনে হয় আমার!
এমনিতে আপনকে পড়াতে গেলে দেখা তো
হয়ই, তাও আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে যাই, ফুচকা
খেতে যাই। ডেয়ারি-মিল্ক-বা
ব্লি, ফুচকা স্নিগ্ধার ফেভারিট।তবে যখন
আপন সব বুঝে গেল তখন থেকে ওকেও সাথে
নিতে হয়!
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ফোনে ওর কন্ঠ
শুনলেই আমার অন্যরকম শান্তি লাগে! রাজ্যের গল্প
শুরু করে মেয়েটা, সারাদিন কোথায় কি করল সব
আমাকে বলা চাই। আর অদ্ভুত সব কল্পনায় ডুবে
থাকে।
-আচ্ছা তুমি আমাকে মুভির হিরোদের মত প্রপোজ
করতে পারোনা?(স্নিগ্ধা)
-কেন? প্রপোজ না করলে বুঝি প্রেম হয়না?
-আরে না, তা না, আমার ইচ্ছা করে আর কি।
জানো,আমার না ইদানিং একটা কাজ করতে খুব মন চায়।
ঐ যে টিভিতে দেখায় না, নায়ক-নায়িকা পালিয়ে গিয়ে
রাতের বেলা বনের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে বসে
থাকে? ঐরকম তুমি আর আমিও হারিয়ে যাব......
-তারপর?
-আগুনের ভেতর দিয়ে একজন আরেকজনকে
দেখব.....হঠাৎ দূরে কি যেন একটা ডেকে
উঠলে আমি ছুটে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরব!
সো রোমান্টিক এন্ড এডভ্যাঞ্চারাস!
-তুমি আসলেই একটা পাগলী। সারাদিন এসব দেখ আর
আজেবাজে ভাব। তাই তোমার মধ্যে বাস্তবতার
কোনো ছোঁয়াই নেই।
-অই কি বলতে চাও তুমি? নাটক-উপন্যাসে যা থাকে সব
অবাস্তব? জ্বি না,কিছুটা হলেও বাস্তব।
-তোমার মাথা। ওসব কাহিনী আর বাস্তব কোনোদিন
এক হয়না। আচ্ছা ধর, এখন তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে
গেছে। আমি যেহেতু এখনো ছাত্র সো কিছুই
করতে পারবনা। কিন্তু গল্প-নাটকে এসব কোনো
ফ্যাক্ট না। সেখানে যেভাবে হোক নায়ক-নায়িকার
মিল হয়ে যায়।
-বাস্তবেও হবে। যদি আমার সাথে এমন হয়য় তাহলে
আমি ওই ছেলেকে তোমার কথা বলব। সে মুভির
ঐ সাইড নায়কগুলার মত আমাকে তোমার হাতে তুলে
দিবে! বুঝলে?
-কয়দিন পর এইচ.এস.সি দেবে,এত বড় মেয়ে
এখনো এই টাইপের কথা বল! তুমি যে কি আল্লাহ
মালুম।
-ধ্যাৎ, চুপ থাকো তো। এত কথা বল কেন?
-যাক বাবা, সব বললে তুমি এখন আমাকেই.....
-বললাম না চুপ?
কথায় না পেরে আমাকে থামিয়ে দেয়া আর কি! ওর
সাথে তর্ক করেও লাভ নেই। তার চেয়ে নীরবতা
পালন করে শান্তি বজায় রাখাই ভালো!
কিন্তু
সুখের দিনগুলো নাকি তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়।
আমাদেরও তাই হল। হঠাৎ করেই ওর বাবার বন্ধুর
ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।
আপনের পড়ার টেবিলে ছেলের বায়োডাটা আমি
দেখেছি। যথেষ্ট ভালো ছেলে। বিদেশ
থেকে পড়াশুনা করে আসা, প্রতিষ্ঠিত, দেখতেও
নায়কের মত। স্নিগ্ধা সুখেই থাকবে।
তাই ওর অনবরত
কান্নায় কর্ণপাত না করে বিয়ে করে ওকে সুখী
হতে বললাম। এই মুহূর্তে ওর বাবা-মার সামনে যাবার
যোগ্যতা আমার নেই। তার চেয়ে বড় কথা ওনাদের
বিশ্বাস, সম্মান কিভাবে নষ্ট করব আমরা। ওকে
অনেক বুঝিয়েও পারলাম না, শেষে বুকে পাথর
বেঁধে ফোন অফ করে দেশের বাড়ি চলে
আসলাম বাবা-মার কাছে।
বাড়ি ঢুকতেই দেখি মা রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে
আছে। মাকে জড়িয়ে ধরে বুকের কষ্টটা
অনেকখানি হালকা হয়ে গেল। বাবা, ছোট বোন সবাই
ভীষন খুশি আমাকে পেয়ে। দুপুরে খেয়ে একটু
শুলাম। চোখে ঘুম নেই, মনে হচ্ছে সারা দেহেই
একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা ছেয়ে আছে। আর দুই
দিন, তারপর স্নিগ্ধা হয়ে যাবে অন্যের।
আমি আনমনে গ্রামের রাস্তায় হাঁটছি।
স্নিগ্ধার বিয়ে
হয়ে গেছে। কিন্তু আমি কিছুই ফিল করতে পারছিনা।
আমার বোধশক্তি পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে।
হঠাৎ রাস্তায় কাউকে দেখে আমি ভীষন চমকে
উঠলাম।
স্নিগ্ধার মত লাগছে! ধ্যাৎ ও এখানে আসবে
কিভাবে। কাছে যেতেই আমি নিজের চোখকে
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। স্নিগ্ধাই তো! ও আমাকে
শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
-এই তুমি এখানে এলে কেমন করে? তোমার
স্বামী কোথায়? পালিয়েছ তুমি?
-হ্যাঁ আমি পালিয়েছি। ঐটা কেমন স্বামী? আমার দিকে
ফিরেও তাকায়না। সারাদিন টাকার পেছনে দৌড়ায়। তোমার
মত ভালবাসেনা আমাকে। তাই আমি তোমার কাছে
ফিরে এসেছি!
-পাগল হয়েছ তুমি? এখন বিয়ে হয়ে গেছে
তোমার। ফিরে যাও, স্বামীকে নিজের মত করে
গুছিয়ে নাও।
আর্তনাদ করে উঠল ও।
-না আমি যাবনা। ওরা আমাকে বই পড়তে দেয়না। বলে
মেয়েদের কাজ ঘরকন্না। ওরা কেন টিভি দেখবে
বই পড়বে? আমি ওখানে সুখী হতে পারবনা। আমি
তোমার সাথে থাকব।
-তা সম্ভব না। তোমার বাবা-মার জন্য হলেও প্লিজ
মানিয়ে নাও।
-তুমি নেবেনা আমাকে?
-না।
-তাহলে আমি এ জীবন রাখবনা।
বলেই ও ছুটতে লাগল। আমার কোন কথা শুনছেনা।
ছুটতে ছুটতে একটা জায়গায় দাঁড়াল, যার নিচে প্রবল
স্রোত। এ কি, এসব জায়গা তো মুভিতে দেখেছি।
আমাদের গ্রামে তো কোনোদিন এজায়গা
দেখিনি। আজ কোথা থেকে এল? সব কেমন
এলোমেলো লাগছে। আমি ওর কাছে পৌছানোর
আগেই ও লাফ দিল। স্নিগ্ধা.......
...........
-"এই ভাইয়া কি হইছে তোর? এমন চিৎকার দিলি কেন?
খারাপ স্বপ্ন দেখছিস?"
ছোট বোনের ডাকে ধরমড়িয়ে উঠে বসলাম।
কখন যে চোখ লেগে এসেছিল বুঝতেই পারিনি।
এতক্ষন তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ!
ওর বলা মুভির কাহিনী আর ওকে নিয়ে আমার
দুঃশ্চিন্তা-সব মিলিয়ে এই অদ্ভুত স্বপ্ন। এত বাস্তব
মনে হচ্ছিল সবকিছু, ভাবতেই আমি শিউরে উঠলাম।
তবে যাই বলিনা কেন ওকে ছাড়া যে বাঁচতে পারবনা
এটা নিশ্চিত। কি করব কি করব ভাবছি, হঠাৎ স্নিগ্ধার ফোন!
রিসিভ করতেই শুনি ওর আম্মু কথা বলছে!
বোনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আপন নাকি
ওর আম্মু আব্বুকে সবকিছু বলে দিয়েছে। ওর বাবা
প্রথমে খুব রেগে গেলেও এখন মেয়ের
সুখের কথা ভেবে ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে।
আমাকে দেখা করতে বলেছে। ওর মায়ের কথা
শুনে আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু
বললাম...
-আন্টি আমি চাইনি আমার জন্য আপনারা কষ্ট পান। প্লিজ
আন্টি আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। স্নিগ্ধা আমার
সাথে খুশি থাকত, ওর সেই খুশিটুকু আমি নষ্ট করতে
পারিনি। তাই এতকিছু ঘটে গেল। এখন আন্টি আপনারা যা
বলবেন আমরা তাই মেনে নিব।
-আসলে বাবা, নিজেদের ব্যস্ততার কারণে বাচ্চারা
আমার কাছ থেকে এতটাই দূরে সরে গিয়েছে
যে এই ইম্পরট্যান্ট কথাটাও নিলা আমাকে বলতে
পারেনি। আমি পারিনি আমার মেয়ের সাথে ঐরকম
সম্পর্ক তৈরি করতে, দোষটা আমারি।
-না আন্টি আর যাই হোক আপনি ওর মা, প্লিজ এভাবে
বলবেন না।
-থাক বাবা, তুমি তোমার বাবা-মাকে নিয়ে এসো, আমরা
কথা বলব। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো জানি তুমি
কেমন ছেলে। চিন্তা করনা।
এক সপ্তাহ পর গেলাম বাবা-মাকে নিয়ে। স্নিগ্ধা এর
মধ্যে একবারো কথা বললনা, এত অভিমান!
মেয়েকে ভালো রাখার কথা বলতে গিয়ে স্নিগ্ধার
রাগী বাবা আমার হাত ধরে কেঁদেই ফেললেন!
সত্যি,সন্তানের জন্য বাবা-মার ভালবাসার তুলনা নেই।
স্নিগ্ধার বিয়ে ক্যান্সেল করতে অনেক ঝক্কি
পোহাতে হয়েছে ওনাকে, তবু মেয়ের সুখের
জন্য সব মঞ্জুর।
স্নিগ্ধা তখন বাসায় ছিলনা। ওকে আর্জেন্টলি আসতে
বলা হয়েছে ফোন করে। বড়দের কথার মাঝে
থাকতে ভালো লাগছিল না তাই আমি বেড়িয়ে
আসলাম। একটু আগাতেই দেখি স্নিগ্ধা আসছে।
আমাকে দেখে প্রথমটায় খুব খুশি হল, পরক্ষনেই
মুখ বাঁকিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি পথ আটকালাম।
-হু আর ইউ মিস্টার? আমার পথ ছাড়ুন।
-আমি তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি, মু হা
হা হা!
-ইহ, এক্কেবারে ভিলেনের মত লাগছে!
-কি বললা! হইতে চাইলাম নায়ক আর বানায়া দিলা ভিলেন!
-ওলে বাবালে, আসছে আমার নায়ক ছাকিপ খান! যখন
আরেক ব্যাটাকে বিয়ে কইরা সুখী হইতে
বলছিলেন তখন মনে ছিলনা? এখন ফুটেন।
-ছরি পাগলী ,তোমার কোন দোছ নাইক্যা, সব
দোছ আমার! কিন্তু এডা তুমি কি কইলা, ছাকিপ খান! মনে
বহুত দুঃখ পাইলাম।
আমার কথা শুনে স্নিগ্ধার হাসি থামছেই না! আহ ,ওর
হাসিতে আমার বুকের উপর থেকে যেন একটা
পাথর নেমে গেল। হাসি থামিয়ে ও বলল,
-আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি আমার স্বপ্নের নায়ক! ঐ যে
মৌসুমি আর সালমান শাহের একটা ছবি আছেনা, ঐটাতে, ""ও আমার বন্ধুগো চির সাথী পথ চলার""
সেই তুমি গানটা,মনে আছে তোমার?
-আবার শুরু হয়ে গেল! আরে পাগলী আমাদের
প্রেমকাহিনীই তো পুরো একটা মুভি! তুমি সেই
মুভির হিরোইন আর আমি হিরো!
-ওহ হো আরেকটা মুভির কথা মনে পড়েছে,নাম
মনে নাই, একটা গান আছে জানো,তুই আমার
হিরো,বাকি সব জিরো?
-তাই নাকি!
-হ্যাঁ তারপর শোনোনা........
তারপর আর কি? আজীবন সে বলতেই থাকবে আর
আমি শুনতেই থাকব...

No comments

Powered by Blogger.